ঢাকা   শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে ক্ষতবিক্ষত বাবুকে থাইল্যান্ড নেয়া হচ্ছে

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০১ এএম | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০১ এএম

 

মোহাম্মদ বাবু (৩৬) মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের ছেলে। কাজ করতেন নয়াপল্টনের ছাপাখানায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বন্ধ হয়ে যায় ছাপাখানা। কিন্তু বাসায় বসে থাকেননি তিনি। জড়িয়ে পড়েন স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। শনির আখড়ায় বাসা হওয়ার এ এলাকায় প্রতিদিন আন্দোলন করতেন।

 

২০ তারিখ সকালের দিকে আন্দোলনে যোগদান করেন। গলি থেকে মিছিল নিয়ে মেইন রাস্তায় চলে যান। এ সময় হেলিকপ্টার দিয়ে টহল দিচ্ছিল বিজিবি। হঠাৎ করে হেলিকপ্টার থেকে গুলি শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবু ৫-৬ হাত দূরে ছিটকে পড়েন। পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে রাখে। রক্তে ভিজে যায় রাস্তা। পরিচিত একজন তার বোনকে ফোন দিয়ে আসতে বলে।

 

বোন বাবুর ৪ বন্ধুসহ ভাইকে উদ্ধার করতে আসেন। কিন্তু পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাস্তায় পড়ে থাকে বাবু। ৫-৬ ঘণ্টা পর বোনের জামাই এসে তাকে মুগদা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান। এখানেও শুরু হয় বিড়ম্বনা। কেন ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে? এ অভিযোগে চিকিৎসা শুরু করতেও দেরি হয়। এদিকে রক্তশূন্য হয়ে বাবু মৃতপ্রায়।

 

কিন্তু মেয়ে তো হাজতে বন্দি। তাকে ছুটাতে যান মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান। পুলিশ তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। পরে রাতে পুলিশ ফোন করে স্বামীকে ৪ হাজার টাকা নিয়ে যেতে বলে। ধারদেনা করে ৪ হাজার টাকা দিলে মুক্তি মেলে বাবুর বোনের। কিন্তু মুক্তি মেলে না বন্ধুদের। তাদের পাঠানো হয় কারাগারে।

 

 

গুলি বাবুর পেটের নিচের অংশ দিয়ে ঢুকে কোমরের পিছন দিয়ে বের হয়ে যায়। গুলি ছিন্নভিন্ন করে বাবুর খাদ্যনালি, মূত্রথলি ও কোমরের হাড়।

 

মুগদা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা তার পেটে দুবার অপারেশন করেন। তার খাদ্যনালির অনেকাংশ কেটে ফেলতে হয়। বাকি অংশ পেটে ফুটো করে আলাদা করে মলত্যাগের রাস্তা বানানো হয়। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি হয় না।

 

পরে সেপ্টেম্বর মাসে তাকে বিএমএমইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসায় কিছু উন্নতি হলেও একদিন খাদ্যনালি নতুন করে বানানো মলত্যাগের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে আসে। ফলে অবস্থা খারাপ হয় বাবুর। মেডিকেল বোর্ড তাকে সিদ্ধান্ত নেয় দেশের বাইরে পাঠানোর। ১৫ দিন আগে থাইল্যান্ডের চিকিৎসক এসে বাবুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পরে তারা তাকে থাইল্যান্ডে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন।

 

মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে জানানো হলে তিনি দ্রুত বাবুকে থাইল্যান্ডে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- তার চিকিৎসায় এক কোটি টাকা খরচ হবে। তবে তা আরও বাড়তে পারে।

 

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ডা. মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার নির্দেশে আমরা বাবুকে দ্রুত বিদেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করি। গতকাল ( শুক্রবার) তার টিকিট পাওয়া যায়।

 

আজ শনিবার বেলা ১১টার বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে তাকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হচ্ছে। থাইল্যান্ডের বেজথানি হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে বাবুকে। এরই মধ্যে গণবিপ্লবে আহত আরও ৪ জন এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

 

বাবুর সঙ্গে থাইল্যান্ড যাচ্ছেন তার বোন সুবর্ণা। তিনি জানান, আমার ভাইয়ের চিকিৎসায় সরকার খুব আন্তরিক। আমরা চিন্তাও করতে পারিনি বাবুকে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড নেওয়া হবে। তিনি স্বাস্থ্য উপদেষ্টার প্রতি পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানান।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান
নির্বাচনে যত দেরি ষড়যন্ত্র তত বাড়বে: তারেক রহমান
আগে স্থানীয় নির্বাচন, পরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ
রমজানে বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে : বাণিজ্য উপদেষ্টা
বড় দরপতনের পর সোনার দামে আবার বড় লাফ
আরও

আরও পড়ুন

বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান

বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান

আগামী রোববার-সোমবারও বন্ধ থাকবে ঢাকা সিটি কলেজ

আগামী রোববার-সোমবারও বন্ধ থাকবে ঢাকা সিটি কলেজ

অত্যাধুনিক সব ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাব ইউক্রেনে: পুতিন

অত্যাধুনিক সব ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাব ইউক্রেনে: পুতিন

নির্বাচনে যত দেরি ষড়যন্ত্র তত বাড়বে: তারেক রহমান

নির্বাচনে যত দেরি ষড়যন্ত্র তত বাড়বে: তারেক রহমান

‘ফিফা ছিল খুবই দুর্বল, আমিই একে বিশাল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছি’

‘ফিফা ছিল খুবই দুর্বল, আমিই একে বিশাল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছি’

ফ্যাসিস্ট হাসিনা কাউকে রেহাই দেয়নি, জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে পালিয়ে গেছেন: রিজভী

ফ্যাসিস্ট হাসিনা কাউকে রেহাই দেয়নি, জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে পালিয়ে গেছেন: রিজভী

স্বৈরাচার সরকারের দোষররা এখনো মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে: রফিকুল ইসলাম খান

স্বৈরাচার সরকারের দোষররা এখনো মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে: রফিকুল ইসলাম খান

জমিয়ত সভাপতি রায়পুরীর ইন্তেকালে বিএনপি মহাসচিবের শোক

জমিয়ত সভাপতি রায়পুরীর ইন্তেকালে বিএনপি মহাসচিবের শোক

অনুপ্রবেশ তত্ত্বে কাজ হল না, ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতায় ফিরছে ইন্ডিয়া

অনুপ্রবেশ তত্ত্বে কাজ হল না, ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতায় ফিরছে ইন্ডিয়া

পতিত সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে পালিয়ে গেছে; মাওলানা শাহজাহান আল মাদানী

পতিত সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে পালিয়ে গেছে; মাওলানা শাহজাহান আল মাদানী

পঞ্চম কিস্তি আসতে চলছে জনপ্রিয় সিরিজ 'আউটার ব্যাংকস' এর, কি আছে সিরিজটিতে?

পঞ্চম কিস্তি আসতে চলছে জনপ্রিয় সিরিজ 'আউটার ব্যাংকস' এর, কি আছে সিরিজটিতে?

জয়সোয়ালের রেকর্ডে পার্থে ভারতের দাপুটে দিন

জয়সোয়ালের রেকর্ডে পার্থে ভারতের দাপুটে দিন

ভোটবাক্স বোঝালো মমতাতেই ভরসা বাংলার

ভোটবাক্স বোঝালো মমতাতেই ভরসা বাংলার

সংসদে আরও এক গান্ধী, অভিষেকেই বড় জয়ের পথে প্রিয়াঙ্কা

সংসদে আরও এক গান্ধী, অভিষেকেই বড় জয়ের পথে প্রিয়াঙ্কা

ছ’মাসেই পুরো বদল! মহারাষ্ট্রে ঝড় বিজেপির

ছ’মাসেই পুরো বদল! মহারাষ্ট্রে ঝড় বিজেপির

আগে স্থানীয় নির্বাচন, পরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ

আগে স্থানীয় নির্বাচন, পরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ

জুলাই বিপ্লবে ছাত্র আন্দোলনে গুলি করা সেই তৌহিদ গ্রেপ্তার

জুলাই বিপ্লবে ছাত্র আন্দোলনে গুলি করা সেই তৌহিদ গ্রেপ্তার

রমজানে বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে : বাণিজ্য উপদেষ্টা

রমজানে বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে : বাণিজ্য উপদেষ্টা

গণ-আন্দোলনে শহীদ পরিবারের অন্তত একজনের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে : সারজিস আলম

গণ-আন্দোলনে শহীদ পরিবারের অন্তত একজনের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে : সারজিস আলম

অনুমোদিত ৩৫০% নগদ লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের বিতরন করল ওয়ালটন

অনুমোদিত ৩৫০% নগদ লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের বিতরন করল ওয়ালটন